আমার অহংকার ” ২১ “


21-february“” আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি  “”

আজ মহান ২১শে ফেব্রুয়ারি! এই ২১শে ফেব্রুয়ারিকে ঘিরে বাঙালি জাতির যত আয়োজন । খুব বেশি মনে পড়ে ছুট বেলার সেই দিনগুলোর কথা , খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে শীতের সেই ছন্দ হারানো গাঁদা ফুল হাতে নিয়ে, খালি পায়ে, আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি ? গানটি গাইতে গাইতে শহীদ মিনারে ফুল দেওয়ার কথা ।
আসলে তখন আমি ছিলাম অনেক ছুট , আর তাই সেদিন এই ফুল দেয়ার অর্থ কি ছিল তা আমার কাছে  অজানা ছিল । বড় হলাম আর এই বিষয়ে অনেক কিছু জানলাম । আর  সেদিন না বুঝলেও আজ কিন্তু আমি  অনেক কিছুই জানি এবং বুঝি । খুব বেশি  কিছু  কি  জানি ?

না জানার অশেষ আগ্রহের মাঝে আমি জেনেছি ভাষা শহীদ আব্দুল জব্বার এর কথা । ভাষা শহীদ আব্দুল জব্বার  ১০শে অক্টোবর ১৯১৯ইং বা বাংলা ২৬শে আশ্বিন ১৩২৬ বঙ্গাব্দ ময়মনসিংহ জেলার গফরগাঁও উপজেলার পাঁচুয়া গ্রামে  জন্ম গ্রহণ করেন । তাঁর পিতার নাম হাছেন আলী এবং মাতার নাম সাফাতুন নেছা। তিনি ধোপাঘাট কৃষিবাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষা জীবন শুরু করেন এবং পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত পড়ে লেখাপড়া শেষ করেন। এরপর তিনি তার পিতাকে কিছু দিন কৃষি কাজে সাহায্য করেন । পরবর্তীতে আরো ভাল কিছু করার আশায় তিনি নারায়গঞ্জে চলে যান এবং সেখানে পরিচয় হয় একজন ইংরেজ নাবিকের সাথে । তিনি আব্দুল জব্বারকে রেঙ্গুন শহরে ( সাবেক দেশ বার্মা, বতর্মানে মায়ানমার ) একটি চাকুরীর ব্যবস্থা করে দেন ।
১২ বৎসর আব্দুল জব্বার রেঙ্গুনে কাজ করেন এবং স্বাস্থ্যগত কারনে মনের মধ্যে লুকিয়ে থাকা ইচ্ছে শিপে কাজ করতে না পারার দরুন পুনরায় গ্রামে ফিরে আসেন । তিনি গ্রামে ফিরে গ্রামের ছেলেদের নিয়ে একটি গ্রাম্য ডিফেন্স দল গঠন করেন যে দলের নেতৃত্বে তিনি কমান্ডার হিসাবে ছিলেন ।
১৯৪৯ সালে তিনি তাঁর এক বন্ধুর বোন আমেনা খাতুনকে বিয়ে করেন । ঐ সংসারে তাঁর একমাত্র ছেলে নুরুল ইসলাম বাদলের জন্ম হয় ।

১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারীর ২/৩ দিন আগে তিনি তাঁর ক্যান্সার আক্রান্ত শাশুড়ীকে চিকিৎসা করাতে জনাব সিরাজুল ইসলামের সহযোগীতায় শাশুড়ীকে ঢাকা মেডিক্যালে ভর্তি করান । তিনি তাঁর আত্নীয়া আয়শা খাতুন এবং পরিচিত আব্দুল হাইয়ের বাসায় ঐ সময় রাত যাপন করে দিনে শাশুড়ীকে সেবা করতে মেডিক্যালে চলে আসতেন ।
ঢাকা মেডিক্যালের বাইরে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে যখন বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্র ভাষার দাবীতে ছাত্র জনতা সোচ্চার এবং শ্লোগানে শ্লোগানে মুখরিত ঢাকার রাজপথ তখন তিনি মেডিক্যালে ভর্তি হওয়া রোগী তাঁর শাশুড়ীর শয্যা পাশে বসা থাকতেন । গুলিবিদ্ধ হওয়ার অল্পক্ষণ আগে সিরাজুল ইসলামের সাথে শাশুড়ীর রোগের ব্যাপারে কথা বলে তিনি মেডিক্যালের গেইটের বাইরে শাশুড়ীর জন্য কিছু ফল কিনতে গেলেন । এবং ঐ সময় তিনি দেখেন রাষ্ট্র ভাষার দাবী বেশ কিছু ছাত্র-জনতা ব্যানারসহ সমবেত হয়েছে এবং বাংলাকে রাষ্ট্র ভাষার দাবীতে অনবরত শ্লোগান দিয়ে যাচ্ছে । আব্দুল জব্বার আর স্থির থাকতে পারেন নি তিনি অসুস্থ শাশুড়ীর জন্য ফল নেওয়ার কথা ভুলে গিয়ে ব্যানার হাতে মিছিলের অগ্রভাগে এসে দাঁড়ান । ঐ সময়ে পুলিশের এলোপাতাড়ি গুলাগুলি শুরু হয়, এতে আব্দুল জব্বার গুলিবিদ্ধ হয়ে পড়েন । পরবর্তীতে তাঁকে গুরুতর আহত অবস্থায় ঢাকা মেডিক্যালে নেওয়া হয় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তিনি ২১ ফেব্রুয়ারী রাতে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।

শহীদ আব্দুল জব্বারকে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার ২০০০ সালে মরনোত্তর ২১শে পদক দিয়ে সম্মানিত করেন।

আব্দুল জব্বার আমাদের মাঝে নেই । তিনি এখন শহীদ আব্দুল জব্বার হয়ে ষোল কোটি বাঙ্গালীর অন্তরে বিরাজমান । তাঁর লাশ দাফন করা হয়েছিল ঢাকার আজিমপুর পুরানো কবরস্থানে ৷ । প্রতিটি একুশের রাতে অনন্ত মিছিলের ঢেউ ভেঙ্গে পড়ে সেখানে এবং ভাষা আন্দোলনের আরও শহীদদের কবরের সাথে তাঁর কবরও ভরে ওঠে ফুলে ফুলে।

About Sarwaria

All Time RaveNous S _is for self respect,a solid score here. A_is for able, for you surely are. R_is for romp, you know how to have fun! W_is for warmth, the glow of your friendship. A_is for advantage, for you are blessed with many. R_is for rational, the way you think.
This entry was posted in আমাদের বাড়ি, Education, People and tagged , , , , , . Bookmark the permalink.

Leave a comment