মা তুমি ভালো থাকো


যদি প্রশ্ন করা হয় পৃথিবীতে সবচেয়ে প্রিয় শব্দ কী? মনে হয়, শর্তহীনভাবে সবাই বলবে ‘মা’। সত্যিই তাই। এমনই বলার কথা। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকন মাকে নিয়ে বলেছিলেন, ‘আমি যা কিছু পেয়েছি, যা কিছু হয়েছি, যা কিছু হতে আশা করি, এর সবকিছুর জন্য মায়ের কাছে ঋণী।’

সিরিয়ার শরণার্থীশিবিরে একটি শিশু গাছে লিখেছিল, ‘মা, তুমি যেখানেই থাকো, সেখানেই আমাদের ঘর।’ সিরিয়া এখন এক জ্বলন্ত অগ্নিকুণ্ড। মরণফাঁদ। সেখানকার মা ও শিশুদের এর থেকে বেদনার সময় আর কখনো হয়তো ছিল না।

সিরিয়ার এক মা তাঁর ছোট সন্তানকে বাঁচানোর জন্য আশ্রয় নিয়েছেন শরণার্থীশিবিরে। শিশুটি বুঝেছিল, পৃথিবীতে মা-ই সব। তাই সে গাছে তার মনের কথা লিখেছিল। এক অন্তহীন শব্দ মা। শব্দটি নিরবধি বলতে থাকলেও যেন আরও বলার থেকে যায়।

রাশিয়ার একটি উপকথা আছে এমন: একজন প্রেমিক তাঁর প্রেমিকার মন পাওয়ার জন্য হৃদয়ের সর্বস্ব উজাড় করে দিচ্ছে। কিন্তু কোনোভাবেই প্রেমিকার মনে জমে থাকা বরফ গলছে না। প্রেমিকা প্রেমিককে শর্ত দিয়ে বলল, আজ সূর্য ডুবে যাওয়ার আগে তোমার মায়ের ‘হৃৎপিণ্ড’ এনে দিতে পারলে আমার ভালোবাসা পাবে। সব শুনে মা ছেলের হাতে হৃৎপিণ্ড তুলে দিল। ছেলেটি দ্রুত দৌড়ে যাওয়ার সময় হঠাৎ পড়ে গেল। সঙ্গে সঙ্গে হৃৎপিণ্ড থেকে শব্দ বের হলো, ‘বাবা, ব্যথা পেলি?’ সন্তানের সুখের জন্য মায়েরা যে সবকিছু করেন, এই উপকথা তারই প্রতীক।

আমাদের দেশের জনপদের মা-বাবাদের খুব কমই সুখের দিন ছিল। এই তো আশি-নব্বইয়ের দশকেও বেশির ভাগ মা-বাবাকে রাত-দিন কষ্ট করতে হতো শুধু এ জন্য যে তাঁদের সন্তান যেন তিনবেলা খেতে পায়। আমার মাও এমনি করে আমাদের জন্য কষ্ট করেছেন। একবার ছুটির দিনে মাকে নিয়ে লেখা পড়ে আমার ভাইবোন কেঁদে ফেলেছিল। এটি মোটেই এ কারণে নয় যে আমি খুব ভালো লিখতে পারি। কারণটা হলো, মায়ের কষ্টগুলো, ছোট ছোট ভালো লাগাগুলো স্পর্শকাতর করে লিখতে পেরেছিলাম।

আমার তো অবশ্যই এবং অনেকেরই প্রিয় লেখক হ‌ুমায়ূন আহমেদ মা দিবসে একবার বলেছিলেন, ‘মায়ের অভিশাপ কখনো সন্তানের গায়ে লাগে না। গায়ে লাগে দোয়া। হাঁসের গায়ের পানির মতো অভিশাপ ঝরে পড়ে যায়।’ পৃথিবীর সব মায়ের মন বোধ হয় এক ও অভিন্ন। সন্তানদের প্রতি তাঁদের এক নিরন্তর ভালোবাসা কাজ করে যায়।

সিরিয়ার আরেকটি ঘটনা না বলে পারছি না। আলেপ্পো শহরে বোমার বিস্ফোরণে ধ্বংস হয়েছে একটি ভবন। ধ্বংসস্তূপের মধ্য থেকে উঠে দাঁড়িয়েছে চার-পাঁচ বছরের একটি শিশু। পিটপিট করে সে তার চেনা পৃথিবীকে দেখার চেষ্টা করছে। চোখ-মুখ, সারা শরীর ঢাকা পড়েছে ধুলার আবরণে। শিশুটি শরীরে হাত দিয়ে দেখে ধুলার নিচে চাক চাক রক্ত জমাট বেঁধে আছে। সিএনএনের এক সংবাদ পাঠিকা এই শিশুটির খবর পড়ার সময় কেঁদে ফেলেন। আসলে মায়েদের হৃদয় এমনই। যেকোনো সন্তানের কষ্টই মায়েদের কষ্ট দেয়।

শরৎ বাবুর (শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়) পর নারীর চোখের জলের হিসাব আর কেউ রেখেছে বলে মনে হয় না। ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি এ পি জে আবুল কালাম আজাদ এক অনুষ্ঠানে বলছিলেন, ছোটবেলায় তাঁদের খুব অভাব ছিল। ঠিকমতো ঘরে খাবার থাকত না। সকালবেলা প্রত্যেককে দুটো রুটি খেতে দেওয়া হতো। ভাইবোনাদের মধ্যে তিনি ছিলেন মায়ের খুব আদরের। মা তাঁকে সঙ্গে নিয়ে খেতে বসতেন। তিনি থালার সব কটি রুটি খেয়ে ফেলতেন। মা যে না খেয়ে থাকতেন, সেটা খেয়ালই করতেন না। একদিন তাঁর বড় ভাই বললেন, ‘কালাম, তুমি কিছুই বোঝো না, মা প্রতিদিন না খেয়ে থাকে। তুমি সব কটি রুটি খেয়ে ফেলো কেন?’ তখন তিনি মাকে জড়িয়ে ধরে অনেক কেঁদেছিলেন। এই মহাবিশ্বে হয়তো সবকিছুর বিকল্প আছে, নেই শুধু মায়ের।

তাই বিশেষ কোনো দিনে মাকে ভালোবাসা বা শ্রদ্ধা জানানোর প্রয়োজন আছে কি না, সেটি হয়তো একটি অন্য বিতর্ক। ক্যালেন্ডারের দিনক্ষণ মেনে আর যা-ই হোক অন্তত মাকে ভালোবাসা যায় না। তবু সারা পৃথিবীর মানুষ আজ গভীর মমতায় মাকে স্মরণ করবে। জগতে মায়ের মতো প্রিয় মানুষ কেউ নেই। এই দিনটি স্মরণ করিয়ে দেয় মাকে ভালোবাসার কথা। তাঁর প্রতি সম্মান মর্যাদার কথা। প্রতিবছর মে মাসের দ্বিতীয় রোববার এ দিবস পালন করা হয়। আজ বিশ্ব মা দিবস। পৃথিবীর সব মায়ের প্রতি রইল অনিঃশেষ ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা। মা, তুমি ভালো থাকো…।

LINK

About Sarwaria

All Time RaveNous S _is for self respect,a solid score here. A_is for able, for you surely are. R_is for romp, you know how to have fun! W_is for warmth, the glow of your friendship. A_is for advantage, for you are blessed with many. R_is for rational, the way you think.
This entry was posted in আমাদের বাড়ি. Bookmark the permalink.

Leave a comment